Friday, December 9, 2011

 


ঘুম ভাংলো কলিং বেলের শব্দে! ভাবলাম এত সকালে আবার কে? গতরাত ৩ টা পর্যন্ত ব্লগিং করেছি তাই হয়তো কলি বেলের শব্দটা ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের একটা অংশ। দ্বিতীয় বার কলিং বেলের শব্দটা প্রথম বারের চেয়ে একটু বেশি লম্বা হবার কারনে গুটি গুটি পায়ে কৌতুহল নিয়ে দরজার আই হোলে চোখ রাখতেই দেখলাম চাচা মিয়া টাইপের একলোক! দরজা খুলব কিনা তা নিয়ে কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করলাম। ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষার পর বড় মামার বাসায় থেকে কোচিং করার সময় আগুন্তুক কেউ আসলে দরজা খুলে অহেতুক সময় নষ্ট না করে ‘ মালিক বাড়িতে নাই আমি কাজের লোক বিকালে মালিক আইব তখন আইয়েন’ বলে নিজের রুমে চলে জেতাম। কিন্তু শেষ মেশ দরজাটা খুলে দিলাম
চেহারাটা চেনা চেনা লাগছিল কিন্তু ঘুমের ঘোর পুরাপুরি না কাটায় জানতে চাইলাম বোঁজুড়,ক্যাল ভথ্র নম ভু ভুলে কোয়া? (শুভ সকাল! কি নাম তোমার কি চাও? )। সে বলল সে একজন স্ট্রিট সিঙ্গার তার নাম ‘ ভিনসেন্ট’ সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে গেল! আরে এই তো সেই লোক!
বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলার সময় বাংলাদেশ দল একেক দিন একেক মহিমা দেখাত আমার আমার সারাদিন মন মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকে থাকতো। যেদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ৫৮ রানে... সে দিন  একটা ট্রামে উঠে ইউনিভার্সিটির দিকে আসছি একই ট্রামে একজন গিটার নিয়ে উঠে শুরু করল “Where do you go to my lovely ” আরে এ তো অঞ্জন দত্তের “মালা” গানের সুর তারপর এক এক করে “500 miles” "জ্যামাইকা ফেয়ার ওয়েল" সহ অনেক পরিচিত গান। সবচেয়ে ভাল লাগলো ফ্রেঞ্চ ভাষায় কয়েকটা গান যাদের অর্থ আমি ঠিক মতো বুঝিনি কিন্তু সুর অসাধারণ!
এরই মাঝে ইউনিভার্সিটি ষ্টেশন পেড়িয়ে অনেক দূর চলে এসেছি! ঠিক করলাম যাইনি যেহেতু আজ আর যাবনা চাচা মিয়ার সাথে গল্প করবো। শেষ ষ্টেশনে চাচা মিয়ার সাথে নামলাম. কিছুক্ষণ পিছু পিছু হাটার পর চাচা মিয়া বিরক্ত হয়ে তাকাতেই ভদ্র ভাষায় বললাম “স্যালু জমা পেল মাহমুদ জ ভিয়া দু বাংলাদেশ”। তারপর অনেক গল্প…..এক পর্যায়ে বললাম তুমি তো অসাধারণ গান কর ভাল কোথাও গাইলেইতো পার, সে বলল সবই তার গীটারের গুন তবে হ্যাঁ পারি কিন্তু কারো অধীনে কাজ করতে ভাল লাগেনা তাই ভিখারির মত ট্রামে ট্রামে গান করি আর কেউ কিছু দিলে ওটা দিয়েই চলি।

আমি বললাম আমাকে গিটার শিখাবা আমি একটু একটু পারি তবে তোমার মতো এক্সপার্ট না ? স্কলারশিপের টাকা থেকে আমার কিছু টাকা বাঁচে প্রতি লেকচারে আমি তোমাকে কিছু টাকা দিব আমার সাধ্যের মধ্যে। সে রাজী হয়নি। ‘চাউ’ বলে চলে আসব এমন সময় বলে শোন আমার একটা গিটার আছে অনেক পুরনো দিনের তবে তার নাই। আমি গিটারটা বিক্রি করতে চাই। বললাম কতো টাকা দাম আমার তেমন বেশি টাকা নাই। সে বলল বেশি টাকা আমি তোমার কাছ থেকে নিবনা মাত্র ১০০ ফ্রাঙ্ক হলেই চলবে। মানুষজন কে বিশ্বাস করে আমি অনেকবার ঠকেছি কিন্তু তারপর ও আমি সহজেই মানুষদের বিশ্বাস করি এবারও তাই করলাম ভিনসেন্টের সাথে তার ভাঙ্গাচুড়া বাড়িতে( অনেকটা পুরনো গ্যরাজ টাইপের) গিয়ে তার বিহীন গিটার কিনে নিয়ে এসে দেখি গীটারের তার কিনতে আরও ৩০ ফ্রাঙ্কের মামলা
বিদায় নেয়ার আগে সে আমার ঠিকানা জানতে চাইতেই আমি ওয়ালেট থেকে একটা কার্ড বের করে দিয়ে এসেছিলাম। সেই কার্ডের সুত্র ধরে আজকের এই কলিংবেল। বাসায় এসে বেশ কিছুক্ষণ মমতা নিয়ে সে তার গিটার বাজায়ে শুনালো এক পর্যায়ে ভেজা ভেজা চোখ সহ গান! জানতে চাইলাম কি বিষয় ? সে বলল দারিদ্রতার জন্য সে সেদিন যে গিটারটা দিয়ে ট্রামে গান করছিল ওটা বিক্রি করে দিয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললাম তুমি কি এই গিটারটা নিয়ে যেতে চাও? উত্তরে সে বলল না এটা তোমার কাছেই থাক আমি সুইজারাল্যান্ড ছেড়ে নিজের দেশে ( স্কটল্যান্ড) চলে যাচ্ছি জানিনা আর আসব কিনা তাই শেষ বারের মতো বাজাতে এসেছি। তবে যদি আমি আবার জেনেভা আসি তোমার বাসায় আসব বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল। যাবার আগে আমাকে এক সেট নাইলনের তার উপহার দিয়ে গেল গীটারের জন্য।
ভিনসেন্টের কোন ফেইস বুক নেই, ইমেইল ও নেই সে  হয়তো আর কোনদিন আসবেনা কিন্তু আমি অপেক্ষায় থাকবো...


ভিনসেন্টের সেই গীটারের একটা ছবি দেয়ার লোভ সামলাতে পারছিনা

My home

No comments: