Saturday, December 31, 2011

High Light 2011


31st December 2011
Rue Prevost Martin
Geneva Switzerland.
============================
The last few moments of the year 2011. Nothing special I would say it’s an ordinary year nothing exciting not much remarkable incidents happened this year. The whole year I fought for publication and 27th December I have submitted my first research article. Lets cross the fingers to be accepted!
First quarter I presented my work in European Geoscience Union Vienna about my research.The city was really awesome!one of the cleanest cities in the world and very similar with Zurich and Geneva. It was great to be at EGU with thousand of people around the world. Perhaps its the single most important conference i have seen so far with huge number of people at a time!

Then flew for Toledo for SWAT conference, the model I am using for my PhD work. It was wonderful to meet with the developers and the core unit of the hydrological modeler’s. I talked many of them in person among them Jeff was really nice. Also I have seen Shrini first time in my life in person about whom I have heard a lot. Things were really wonderful in Toledo but the only disappointing thing was my presentation took at the very last session. I was kind of annoyed for this miss planning.

In September  again went to Zaragoza Spain but not that exciting as it was in Toledo. I made unnecessary arguments with the prominent scientists in hydrology from ETH-Zurich. Lesson learned from Zaragoza was by any situation I should be more professional and be on smiling face. While traveling Zaragoza I did not missed Barcelona and real Madrid stadium. One thing I must remember while traveling the underground subway I got a call from US embassy  Bern asking my passport  as the official procedure of getting VISA for US was finished and they are now looking forward to give me visa. Finally after waiting 14 month I got the US visa!!

Meet new people among Chetan was truly wonderful. His programming skill and devotion of knowledge was awesome. I was lucky to work with him for a while. I must admit the fact that I spend a lot time with facebook and blogs this year, don’t yet know was it good or bad. Two of my write up have selected for print media and I hope to see my printed book in national book fair 2012. Overall it was an average year nothing special!!
Only some experience of visiting Vienna-Bercelona-Madrid-Toledo-Zaragoza could be special for 2011.

Tuesday, December 13, 2011

এ জার্নি বাই সুইস ট্রেন


লুজান থেকে জেনেভা আসার ট্রেন আসতে দুই মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় আছে এরই মাঝে টিকিট কাটতে হবে। থিউডোরাকে বললাম তুমি দাড়াও আমি দৌড়ে গিয়ে ঠিকই এই সময়ে টিকিট কেটে চলে আসব। থিউডোরা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে আমার সাথে যেতে তোমার টিকিট লাগবেনা। আমি বললাম আরে না না গরিব দেশের লোক হতে পারি অন্তত টিকিট কাটার টাকা আছে আমার, বলতে বলতে টিকিট কাউন্টারের দিকে ছুটে যাব এমন সময় থিউডোরা গোলা উঁচু করে বলে [I am telling you believe me! You don’t need a ticket if you are with me! Come back please]জানতে চাইলাম কি স্টোরি! সে বলে আগে ট্রেনে উঠো তারপর বলছি

ট্রেনে উঠলাম টিকিট ছাড়া! কিছুক্ষণ পর টিকিট চেকার আসতেই থিউডোরা তার ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করে দেখাতেই চেকার হাসি মুখে ‘বন ভইয়াজ’ বলে চলে গেল। আমার কৌতুহল আরও এক দফা বেড়ে গেল। জানতে চাইলাম কি রহস্য বল। তোমার কার্ডে এমন কি আছে যে সাথে কেউ থাকলেও তার ভাড়া লাগেনা। সে বলে আগে বল গল্প শোনার পর কোন রকম করুনা করতে পারবানা, আমি বললাম করুনা !! তাও আবার তোমাকে! তুমি তো সুইজারল্যান্ডের লেডি ডন। সে হাসি দিয়ে গল্প শুরু করলো এরই মাঝে ট্রেন ও ধীরে ধীরে চলতে শুরু করলো

ছোট বেলা থেকেই আরসেন কে থিউডোরার  ভাল লাগে! বিশেষ করে আরসেন ক্লাসের অন্য সব ছেলেদের চেয়ে অনেক আলাদা, ডার্টি জোকস- ক্লাসের মেয়েদের ফুসলিয়ে নাইট ক্লাবে নিয়ে যাওয়া এইসবে আরসেনের তেমন কোন আগ্রহ নেই। আরসেনের ভাল লাগে গিটার বাজাতে স্কি করতে আর হাতে গুনা অল্প কিছু বন্ধুর সাথে আড্ডা দিতে। থিউডোরার ঠিক একই বিষয় ভাল লাগে তবে গিটার তার কাছে কঠিন লাগে তাই থিউডোরা ভায়লিন বাযাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
কোন এক বিকেলে আরসেন থিউডোরাকে একটা সঙ্গীত সঙ্ঘে নিয়ে যায়। দর্শকদের গ্যলারিতে থিউডোরাকে রেখে হটাত আরসেন উধাও। থিউডোরা এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে আরসেনকে। হটাত আবিস্কার করে সঙ্গীত শিল্পীদের মাঝে লিড গিটার নিয়ে আরসেন বসে আছে! এটা ছিল থিউডোরাকে দেয়া আরসেনের প্রথম সারপ্রাইজ। সঙ্গীত সন্ধ্যা শেষে জানিয়ে দেয় এই জাতীয় সারপ্রাইজ আরও অনেক পেতে চায় সে! আরসেন বলে তা হলে তো আমাদের একই সাথে থাকতে হবে। দু দিন সময় নিয়ে থিউডোরাকে জানিয়ে দেয় তার বাবা মাকে সে আরসেনের সাথে থাকতে চায়। তারপর শুরু এক সাথে পথ চলা। হাসি কান্না মান অভিমান সারপ্রাইজ সহ আরও অনেক কিছু। সময় গড়ায় থিউডোরার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রস্তাব আসে ভারতের আই আই টি তে পড়তে জাবে কিনা একচেঞ্জ স্টুডেন্ট হিসাবে। কাছের বন্ধুরা সবাই যাচ্ছে তাছাড়া ইঙ্ক্রিডিবল ইন্ডিয়ার বিজ্ঞাপন প্রায় দেখায় টিভিতে।


আরসেন কে ইচ্ছার কথা জানাতেই আরসেন ভাবে একটা ছোট খাট ব্রেক হলে খারাপ হয়না তাছাড়া আরসেনের ও ইচ্ছে ফ্রন্সের মার্সেই থেকে অর্কেস্ট্রার উপর একটা কোর্স করা। তবে দুজনই ঠিক করে যেকোন অবস্থাতেই হোক অন্য কোন রিলেশনশিপে জড়াবে না । এবং ফিরে এসে প্রথমে একটা বাচ্চা নিবে তারপর ইচ্ছে হলে ‘বিয়ে’ না হলে নাই [ প্রসঙ্গত বলে রাখি সুইজারল্যান্ডে আশির দশকের পর বেশির ভাগ বিয়েই বাচ্চা হবার পর কিংবা বাচ্চা আছে কিন্তু বিয়ে করেনি]। ছেলে হলে ‘ইউলিস’ আর মেয়ে হলে ‘ফ্লরিয়ান’ এই দুইটা নাম ঠিক করে আরসেন আর থিউ ডোরা মিলে।
২০০৯ সালের শুরুর দিকে থিউডোরা ভারত আর আরসেন মার্সেই চলে যায় যে যার কাজে। ভালই যাচ্ছিল থিউ ডোরার দিন গুলো। সারাদিন ক্লাস সন্ধ্যায় আড্ডা আর উইকএন্ডে ভারতীয় নাচ‘ ভাঙরা’ শিখে। মাঝে মাঝে আরসেনের সাথে কথা হয় স্কাইপে। এভাবে একদিন দীপালির উৎসবের রাতে বন্ধুদের সাথে আতশ বাজী নিয়ে আনন্দে মেতে উঠে। বেশ কটা বাজী ফুটানোর পর একটাতে কি সমস্যা ছিল যে ফুটছে না,  কাছে থেকে দেখতে গিয়েই ডেকে আনে বিপদ। চোখের কাছে আনতেই বিকট শব্দ করে ফুটে উঠে আতশ বাজিটি আর সাথে সাথেই এক ধরনের তীব্র ব্যথা অনুভব করে থিউডোরা আর বাকীটা তার মনে নেই জ্ঞান ফেরার পর দেখে সে হাসপাতালে পাশে বন্ধুরা ছিল কিন্তু তারপরও তাদের কাউকেই সে দেখতে পায়না। ডাক্তার বেশ কিছু চেক টেক করে সুইজারল্যান্ডে রেফার করে দিল। কোর্স শেষ না করেই ফিরে আসতে হল থিউডোরাকে। সুইজারল্যান্ডের ডাক্তার দুই সপ্তা ধরে অনেক রকমের চেক করে ব্যনদ্যাজ খুলে দিতেই ২ সপ্তাহ পর আবার এই সুন্দর পৃথিবী দেখতে পায়।

সব কিছুই আগের মতো তার মানে তো আমি ভাল হয়ে গেছি! কিন্তু না, বেশ কয়েক ঘণ্টা পর মাথায় এক ধরনের ব্যথা অনুভব করে সে। ডাক্তার এটা নিয়েই খুব চিন্তিত ছিলেন। পরবর্তীতে ডাক্তার বুঝিয়ে বলেন সমস্যাটার কথা। অন্তিরিক্ত রক্তক্ষরণ হবার কারনে মস্তিস্কের কোন একটা নার্ভ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্য জনক হলেও সত্য এই রোগটার কোন ঔষধ এখনো বের হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে খুব জোর ২/ত বছর পর থিউডোরা আর কিছুই দেখতে পারবেনা
গল্পের এই পর্যায়ে আমি জানতে চাই আরসেনের অনুভুতি কি ছিল? সে হাসি দিয়ে বলে আরসেন আমার চেয়ে অনেক বেশি শক্ত মনের মানুষ। হাসপাতাল থেকে ফিরে কিছুদিন পর আরসেন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমি বেশ কবার মানা করেছি। আমি নিজেও ভেবে পাইনা একটা অন্ধ মেয়েকে নিয়ে সে সারা জীবন থাকবে কি ভাবে? আরসেন নাছোড় বান্দা তাই বিয়েতে রাজি হয়েছি। ২০১০ এর শুরুর দিকে আমরা বিয়ে করেছি। আর আমার ছেলেকে তো তুমি দেখেছই হাসপাতালে দুই মাস আগেসুইজারল্যান্ড সরকার অন্ধ-প্রতিবন্দি দের জন্য বিশেষ টিকিটের ব্যবস্থা রেখেছে যা দিয়ে প্রতিবন্দি মানুষটির সাথে তার কেউ সাহারা হলে সেও বিনা টিকিটে চড়তে পারবে। আমি অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আজ এই সুবিধা পেলাম। যদিও থিউ ডোরা এখনো পুরপুরি অন্ধ হয়নি তারপরও সে এই সুবিধা পাবে। থিউডোরার গল্প শেষ এদিকে ট্রেন লুজান থেকে জেনেভা চলে এসেছে এবার বিদায়ের পালা, ‘ থাঙ্কস ফর এভ্রিথিং উই সি ইচ আদার এগেইন বলে চলে এসেছি’

গত দুই মাস আগে থিউডোরা ছোটো একটি দেব শিশুর মা হয়েছে শিশুটির নাম ইউলিস। আমি দুই মাস আগে ইউলিস কে দেখতে গিয়েছিলামতখনো জানতাম না থিউডোরা আর কয়েক বছর পর এই দেব শিশুটিকে দেখতে পাবেনা।

Friday, December 9, 2011

 


ঘুম ভাংলো কলিং বেলের শব্দে! ভাবলাম এত সকালে আবার কে? গতরাত ৩ টা পর্যন্ত ব্লগিং করেছি তাই হয়তো কলি বেলের শব্দটা ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের একটা অংশ। দ্বিতীয় বার কলিং বেলের শব্দটা প্রথম বারের চেয়ে একটু বেশি লম্বা হবার কারনে গুটি গুটি পায়ে কৌতুহল নিয়ে দরজার আই হোলে চোখ রাখতেই দেখলাম চাচা মিয়া টাইপের একলোক! দরজা খুলব কিনা তা নিয়ে কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করলাম। ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষার পর বড় মামার বাসায় থেকে কোচিং করার সময় আগুন্তুক কেউ আসলে দরজা খুলে অহেতুক সময় নষ্ট না করে ‘ মালিক বাড়িতে নাই আমি কাজের লোক বিকালে মালিক আইব তখন আইয়েন’ বলে নিজের রুমে চলে জেতাম। কিন্তু শেষ মেশ দরজাটা খুলে দিলাম
চেহারাটা চেনা চেনা লাগছিল কিন্তু ঘুমের ঘোর পুরাপুরি না কাটায় জানতে চাইলাম বোঁজুড়,ক্যাল ভথ্র নম ভু ভুলে কোয়া? (শুভ সকাল! কি নাম তোমার কি চাও? )। সে বলল সে একজন স্ট্রিট সিঙ্গার তার নাম ‘ ভিনসেন্ট’ সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে গেল! আরে এই তো সেই লোক!
বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলার সময় বাংলাদেশ দল একেক দিন একেক মহিমা দেখাত আমার আমার সারাদিন মন মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকে থাকতো। যেদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ৫৮ রানে... সে দিন  একটা ট্রামে উঠে ইউনিভার্সিটির দিকে আসছি একই ট্রামে একজন গিটার নিয়ে উঠে শুরু করল “Where do you go to my lovely ” আরে এ তো অঞ্জন দত্তের “মালা” গানের সুর তারপর এক এক করে “500 miles” "জ্যামাইকা ফেয়ার ওয়েল" সহ অনেক পরিচিত গান। সবচেয়ে ভাল লাগলো ফ্রেঞ্চ ভাষায় কয়েকটা গান যাদের অর্থ আমি ঠিক মতো বুঝিনি কিন্তু সুর অসাধারণ!
এরই মাঝে ইউনিভার্সিটি ষ্টেশন পেড়িয়ে অনেক দূর চলে এসেছি! ঠিক করলাম যাইনি যেহেতু আজ আর যাবনা চাচা মিয়ার সাথে গল্প করবো। শেষ ষ্টেশনে চাচা মিয়ার সাথে নামলাম. কিছুক্ষণ পিছু পিছু হাটার পর চাচা মিয়া বিরক্ত হয়ে তাকাতেই ভদ্র ভাষায় বললাম “স্যালু জমা পেল মাহমুদ জ ভিয়া দু বাংলাদেশ”। তারপর অনেক গল্প…..এক পর্যায়ে বললাম তুমি তো অসাধারণ গান কর ভাল কোথাও গাইলেইতো পার, সে বলল সবই তার গীটারের গুন তবে হ্যাঁ পারি কিন্তু কারো অধীনে কাজ করতে ভাল লাগেনা তাই ভিখারির মত ট্রামে ট্রামে গান করি আর কেউ কিছু দিলে ওটা দিয়েই চলি।

আমি বললাম আমাকে গিটার শিখাবা আমি একটু একটু পারি তবে তোমার মতো এক্সপার্ট না ? স্কলারশিপের টাকা থেকে আমার কিছু টাকা বাঁচে প্রতি লেকচারে আমি তোমাকে কিছু টাকা দিব আমার সাধ্যের মধ্যে। সে রাজী হয়নি। ‘চাউ’ বলে চলে আসব এমন সময় বলে শোন আমার একটা গিটার আছে অনেক পুরনো দিনের তবে তার নাই। আমি গিটারটা বিক্রি করতে চাই। বললাম কতো টাকা দাম আমার তেমন বেশি টাকা নাই। সে বলল বেশি টাকা আমি তোমার কাছ থেকে নিবনা মাত্র ১০০ ফ্রাঙ্ক হলেই চলবে। মানুষজন কে বিশ্বাস করে আমি অনেকবার ঠকেছি কিন্তু তারপর ও আমি সহজেই মানুষদের বিশ্বাস করি এবারও তাই করলাম ভিনসেন্টের সাথে তার ভাঙ্গাচুড়া বাড়িতে( অনেকটা পুরনো গ্যরাজ টাইপের) গিয়ে তার বিহীন গিটার কিনে নিয়ে এসে দেখি গীটারের তার কিনতে আরও ৩০ ফ্রাঙ্কের মামলা
বিদায় নেয়ার আগে সে আমার ঠিকানা জানতে চাইতেই আমি ওয়ালেট থেকে একটা কার্ড বের করে দিয়ে এসেছিলাম। সেই কার্ডের সুত্র ধরে আজকের এই কলিংবেল। বাসায় এসে বেশ কিছুক্ষণ মমতা নিয়ে সে তার গিটার বাজায়ে শুনালো এক পর্যায়ে ভেজা ভেজা চোখ সহ গান! জানতে চাইলাম কি বিষয় ? সে বলল দারিদ্রতার জন্য সে সেদিন যে গিটারটা দিয়ে ট্রামে গান করছিল ওটা বিক্রি করে দিয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললাম তুমি কি এই গিটারটা নিয়ে যেতে চাও? উত্তরে সে বলল না এটা তোমার কাছেই থাক আমি সুইজারাল্যান্ড ছেড়ে নিজের দেশে ( স্কটল্যান্ড) চলে যাচ্ছি জানিনা আর আসব কিনা তাই শেষ বারের মতো বাজাতে এসেছি। তবে যদি আমি আবার জেনেভা আসি তোমার বাসায় আসব বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল। যাবার আগে আমাকে এক সেট নাইলনের তার উপহার দিয়ে গেল গীটারের জন্য।
ভিনসেন্টের কোন ফেইস বুক নেই, ইমেইল ও নেই সে  হয়তো আর কোনদিন আসবেনা কিন্তু আমি অপেক্ষায় থাকবো...


ভিনসেন্টের সেই গীটারের একটা ছবি দেয়ার লোভ সামলাতে পারছিনা

My home

Thursday, December 8, 2011

টুকরো গল্পঃ [দুই]




নুরুল হুদা নামে আমাদের পাড়ায় এক লোক আছে যে গরু বাজারে যেতে চায় না কোরবানি ঈদে, কারন একবার সে গরু কিনতে গিয়ে পকেটমারের হাতে সব টাকা খুইয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিল তারপর থেকে পাড়ার কেউ একজন গরু কিনলে ভাগ দেয়ার মতো সুযোগ আছে কিনা জানতে চায় বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে নুরুল হুদার বুদ্ধিটা আমি কাজের লাগিয়েছি সুইজারল্যান্ডে এসে পাশের এপার্টমেন্টের দম্পতির [ লাউরা আর আলেক্স] কাছে জানতে চেয়েছি তোমরা কি তোমাদের ইন্টারনেট( ওয়াইফাই) পিনকোডটা আমার সাথে শেয়ার করবে তাহলে তোমাদের লাভ আমারও লাভ আমি তোমাদের বিলের অর্ধেক দিব[ ভেবেছিলাম ওদের আরো কিছুক্ষণ বুঝাতে হবে কিন্তু আলেক্সের উত্তর শুনে অবাক হলাম যে সে আমার আগের ভাড়াটিয়ার সাথেও শেয়ার করেছে, তার মানে সুইজারল্যান্ডে নুরুল হুদার অভাব নাই]
রাজী হবার পর নিয়ম হচ্ছে তার লেটার বক্সে প্রতিমাসে ৫০ ফ্রাঙ্ক একটা খামের ভিতর দিয়ে দেয়া এমনি ভাবে আমি গত দুই বছরে প্রতি মাসে ৫০ ফ্রাঙ্ক করে বাঁচিয়েছি তো গত তিনদিন ধরে বাসায় নো নেটওয়ার্ক এক্সেস দেখাচ্ছে, বাধ্য হয়ে পাসের ফ্লাটে বেল চাপতেই লাউরা বেরিয়ে এসে জানতে চাইল কি চাই, আমি বললাম সমস্যার কথা সে আমাকে বলল তার বয় ফ্রেন্ডের( আলেক্সের) সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে তাই এই অবস্থা
 
আমি খুব অবাক হয়ে জানতে চাইলাম বয় ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেক আপ হবার সাথে ইন্টারনেটের কি সম্পর্ক? সে বলল তারা দুইজন মিলে বিভিন্ন বিলিং ভাগাভাগি করে দেয় তার মাঝে টিভির বিল আর গ্যাস তার ভাগে ইন্টারনেট ময়লার বিল তার বয় ফ্রেন্ডের ভাগে এমন কি ইন্টারনেট বিল কতো তাও সে জানেনা তার কোন ফেইস বুক টুক নেই এবং সে ইন্টারনেটের ঝামেলা পছন্দ করেনা [ আমি মনে মনে বললাম খাইছে আমারে] কারন সে পেইন্টার দিনভর বিভিন্ন বিল্ডিঙে রং দেয় সন্ধ্যায় আয়েশ করে মারিজুয়ানা টানে গল্প শেষে মুখ কালো করে ফিরে আসব এমন সময় বলে দাড়াও আমার নতুন বয় ফ্রেন্ডকে একটা ফোন করে দেখি সে ইন্টারনেট ব্যবহার করবে কিনা, আর তোমার সাথে শেয়ার করবে কিনা (একবার ভাবভছিলাম এক বয় ফ্রেন্ড যেতে না যেতে তিন দিনের মাথায় আরেক জন? পরে মনে করলাম প্রশ্নটা করা ঠিক হবেনা তাছাড়া কাছাকাছি উত্তর আমি জানি) কিঞ্চিৎ আসার আলো দেখতে পেয়ে দুয়া দুরুদ যা ছোট বেলায় শিখেছিলাম এক এক করে পড়তে শুরু করলাম  

আমারও দুয়া পড়া শেষ সে এসে বলল ডিসেম্বারের প্রথম সপ্তার শেষের দিনে পাবা একই দামে!( হয়তোবা দুয়া দুরুদ ট্র্যাফিক জ্যামে পড়ে নাই তাই ডাইরেক্ট একশন) ধন্যবাদ দিয়েইট ওয়াজ ভেরি কাইন্ড অফ ইউ বলে চলে এসেছিআগামী সপ্তাহটা আমার জন্য ক্রিটিক্যাল কারন লো ব্যান্ড উইদথ এর ফ্রি নেটওয়ার্ক বারান্দায় গেলে পাওয়া যায় কিন্তু তাপমাত্রা তিন চারের কাছাকাছি তাই বেশিক্ষণ থাকা যায়না ভাল ভাল লেখকেদের প্রকাশিত গল্প গুচ্ছের বেশির ভাগেরই ম্যুরাল থাকে কিন্তু আমার গল্প গুলা খুব এলেবেলে সব আশপাশের ঘটে যাওয়া সাধারন ঘটনা তাই ম্যুরাল পাওয়া খুব কঠিন (আমি নিজেও পাইনা শুধু আজকের লেখার ঘটনাটা দিয়ে একটা মেসেজ দিতে চাই যা আমার নিজস্ব ধারনার উপর তৈরি আর এই ধারনাটা হচ্ছে
 
মানুষের তৈরি কিছু নিয়ম কানুন দিয়েইআইন নামে শব্দটার উৎপত্তি যেটা কখনো সামাজিক কখনো রাজনৈতিক কখনো গোত্রীয় কিংবা ধর্মীয় সময় বদলায় কিন্তু সময়ের সাথে সমানুপতিক হারে আইন বদলায় না বিশেষ করে ধর্মীয় আইনের পরিবর্তনের হার খুব ধীরগতি সম্পন্ন (হয়তোবা স্থির) এতে করে আমার কিছু যায় আসেনা, কিন্তু খারাপ লাগে তখনি যখন দেখি লাউরার মতো চরিত্র গুলোর মতো এক শ্রেণীর মানুষ ধর্মীয় এবং সামাজিক আইন গুলোকে বাদামের খোসার মতো করে ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয় আবার এই একই পৃথিবীর বিরাট একটা শ্রেণীর মানুষ আইনের ফাঁদে পড়ে ধুকে ধুকে কষ্ট পায়

টুকরো গল্পঃ [এক]



এই উইক এন্ডের [২৯.৩০ নভেম্বার ২০১১] ঘুম ভাঙল সহকর্মী ভায়লিতার এস এম এস পেয়ে, সে আমার সাথে কখনোই ইংরেজি বলেনা তার উদ্দেশ্য হচ্ছে তিন বছরে সে আমাকে ফ্রেঞ্চ শিখায়েই ছাড়বে আমিও ঠিক করেছি তাই হোক ফ্রেঞ্চ আমি শিখেই ছাড়ব তার এস এম এস পড়ে যা বুঝলাম তা হচ্ছে সে আমাকে একটা ক্যানন ক্যমেরার ফিক্সড লেন্স কিনে দিতে চায় প্রথমে ভেবেছিলাম স্প্যাম ইমেইলের মতো স্প্যাম এস এম এস কবে থেকে শুরু হলো? আমার ফ্রেঞ্চের উপর আমার নিজেরই আস্থা নেই তাই গুগুলে ট্রান্সলেট করে দেখলাম অর্থ প্রায় কাছাকাছি কনফার্মেশনের জন্য ফোন করলাম ভায়লিতাকে স্যালুত ! কেছ কিছ পাস মুনামি...(hai whats going on my friend! )’ বলতেই সে বলল ডিসেম্বারের প্রথম সপ্তাহে আমাকে ক্যানন ৫০ মিমি. ফিক্সড লেন্স কিনে দিবে তার সাথে কখন আমি মিডিয়া মার্কে যেতে পারি সময়টা যেন জানাই
ঠাহর করে উঠতে কিছুক্ষণ সময় লাগল তারপর আবার এই নিদৃষ্ট লেন্সেই বা কেন? জানতে চাইলাম ঘটনা কি বিস্তারিত বল তারপর সে বলে আমার মা নতুন বয়ফ্রেন্ড পেয়েছে! তোমার অবদানের জন্য তোমাকে পুরস্কৃত করা হবে [ মনে মনে বললাম যাক আগে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি..]
ঘটনার শুরু দুই সপ্তাহ আগে, আমাকে এক সন্ধ্যায় পিজা খাবার দাওয়াত করে বলে তোমার ক্যেমারাটা নিয়ে এসো ভাবলাম মাগনা পাইলে মানুষ আলকাতরাও খায় আর এই দফায় তো পিজা! সেদিন হাত না ধুয়েই ক্যমেরা নিয়ে সোজা তার বাসায় বাসায় গিয়ে দেখি আমি ভায়লিতা আর তার মা অন্য সবাই সাধারন কাপড়ে কিন্তু ভায়লিতার মা একটু বেশি ড্রেসড আপ, চুলের পাশে ফুল টুল দিয়ে অস্থির অবস্থা এক পর্যায়ে ভায়লিতা তার মায়ের কটা ছবি তুলে দেবার জন্য বলার পর আমি প্রায় ১০ /১২ টা ছবি তুলে দিয়ে এক সময় কি মনেকরে বলেছিলাম আমার ভাল লেন্স নেই পোট্রেট ছবি তোলার জন্য ফিক্সড লেন্স লাগে আমার লেন্সটা ফিক্সড লেন্সনা একটা ক্যনন ৫০ মি মি . ফিক্সড লেন্স থাকলে খুব ভাল হতো, কিন্ত আমি দেশে যাবার জন্য টাকা জমাচ্ছি তাই আপাতত এই প্রজেক্ট বাদ
ছবি তোলার পরের গল্পটা আমার জানা ছিলনা যেটা পরে জেনেছি ভায়লিতার বাবা মারা গেছে দুই বছর তার মা একা থাকে বিষয়টা তার ভাল লাগেনা তাই সুইজারল্যান্ডের অন লাইন বন্ধু খুঁজার সাইটে [swissfriends.ch] সে তার মায়ের নতুন বন্ধু ঠিক করে দেবার জন্য আমার তোলা ছবি গুলা দিয়ে সে একটা প্রফাইল তৈরি করেছে আর সেই প্রফাইল দেখে জন আগ্রহ দেখিয়েছে, তিন জনের মাঝে মিস্টার ইমানুয়েল নামে একজনকে তার মা নতুন বন্ধু হিসেবে ফাইনাল করেছে  

ভায়লিতা এখন নতুন বাবা আর মা কে নিয়ে নানান জায়গায় ঘুরতে যায় আর ফেইস বুকে আপডেট দেয় Having beautiful time with my new family member! its my new father” আমার ভালই লাগে...৬২ বছরের একজন মহিলার জন্য বয় ফ্রেন্ড খুঁজে দেয়ার মতো অসাধারন কাজের ফটো গ্রাফার হিসাবে নিজেকে ভাবতে! টিউশনি- স্কলারশিপ- চাকুরী সহ অনেক পেশা থেকে টাকা কামিয়েছি কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও ঘটক হিসেবে কিছু একটা হয়তো এটাই আমার প্রথম শেষ কামাই ভাবতে খুব অবাক লাগে এক প্রান্তে আমরা এক প্রান্তে সুইসরা আশপাশের কাছের মানুষদের মাঝে ৬০ বছরে কেউ বিধবা হলে তার জন্য নতুন করে বন্ধু খুঁজে দেবার সাহস আমার আছে কিনা কিংবা যার জন্য খুঁজে দিব সেই বা সহজে একসেপ্ট করবে কিনা এই বিষয়টা নিয়ে মাঝে মাঝে খুব চিন্তা করি আমাদের সমাজে পুরুষদের ৬০ বছরে নতুন বন্ধু পেতে সমস্যা হয়না কিন্তু মহিলাদের?