Thursday, March 1, 2012

সুইজারল্যান্ডের গল্পগুচ্ছ [পর্ব দুইঃ অপেক্ষা]


ফ্রাইডে সারাদিন ক্লাস পরীক্ষা শেষে রাত ৯ টায় ঘরে ফিরতেই ইভেত হফারের প্রশ্ন, রাত তিনটায় বিমান বন্দর যাবা? মনে মনে চিন্তা করলাম আমারে কি কামড়াইন্না কুত্তায় পাগলাইছে যে আমি পায়ের ঘাম মাথায় তুলে সারা দিন কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখে এখন না ঘুমায়ে বিমান বন্দরে যাব ! নাহ যাবনা আমি খুব ক্লান্ত এখন ঘুমালে আগামী কাল দুপুর পর্যন্ত উঠতে পারবোনা উঠতে চাইও না বলে আমার ঘরের দিকে রওনা দিলাম। না মানে তুমি আমাকে সেদিন বাংলাদেশী কারী রান্না করে খাইয়েছো তাই ভাবলাম তোমাকে নিয়ে কোথাও খেতে যাই গেলে তোমারই লাভ বিমানবন্দরের পাশে একটা টিপিক্যাল স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট আছে!

ভেবে দেখ আবার, আমি অনেক দিন পর পর ওখানে খাই তুমি গেলে এক সাথে খাওয়া যাবে আমার জমানো কিছু টাকা আছে আমি আমার একজন কাছের মানুষকে রিসিভ করতে যাব ! চোখের সামনেই স্প্যানিশ রেস্টুরেন্টগুলার স্মোকড সেলমন মাছের উপর মাশরুম, সালাদ রেডওয়াইন আর খাবার শেষে ডেজার্ট হিসাবে হরেকরকম ফল দিয়ে করা ফ্রুট সালাদ বিভিন্ন স্বাদের আইসক্রিম ভাসতে থাকল। দশ সেকেন্ডের কল্পনা শেষ হবার পর মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম না মানে ইয়ে, আসলে খাবারের জন্য না বেশি প্রয়োজন হলে যেতে পারি তোমার সাথে তাছাড়া তোমার রাতে একা ড্রাইভিং করা ঠিক হবেনা যে দিন কাল পড়ছে। ছিনতাই-টিনতাই হচ্ছে রাতে। ইভেত মুচকি হাসি দিয়ে বলল গেলে এখনি শুকনা কিছু একটা খেয়ে ঘুমিয়ে পর রাতে ভালো ভুড়িভোজের জন্য পেট খালি রেখো । ছিনতাইকারির খেয়ে কোন কাজ নাই যে রাতে মাইনাস তাপমাত্রা আর বরফের স্তূপের উপর বসে থাকবে ছিনতাই করার জন্য এটা ইভেত ভালোই জানে তারপরও কিছু একটা বলতে হবে তাই বললাম।

তিনটা বাজার আগেই দরজায় টুকটুক শব্দে ঘুম থেকে উঠে ভারী পুলওভার গায়ে দিয়ে ইভেতের গাড়ীতে বসেই আবার ঘুম। বিমান বন্দরে আসার পর একবারে ঘুম ভাঙ্গে তাই রাস্তায় কোন গল্প হয়নি। বিমান বন্দরের এরাইভাল পয়েন্টে আসার পর দেখলাম লম্বাচুড়া সুন্দর মত এক লোককে ইভেত চুমু খাচ্ছে! লোকটা একটু বুড়া হলেও ভয়ানক রকম সুন্দর নিমিষেই তাকে সুন্দর আলীনাম দেয়া যায়। আবার মনে মনে ভাবলাম এ আল্লা বুড়ীর দেখি চরিত্র খারাপ! সাক্ষাত বয়ফ্রেন্ড থাকতে পরপুরুষের সাথে কি আবেগ! দেখেও না দেখার ভান করে অন্য দিকে তাকায়ে আছি এমন সময় সুন্দর আলি হ্যান্ড সেকের জন্য হাত বাড়িয়ে বলে হাই এই এম স্টেফান!

নাইস টু মিট ইউ বাংলাদেশি ইয়াংম্যান! আমি তোমার কথা অনেক শুনেছি ইভেতের কাছে। আসো আমরা একটা রেস্টুরেন্টে বসে গল্প করি। চিন্তা করে দেখলাম শুভকাজে দেরি করা ঠিক হবেনা তাই বললাম লেটস গো। ইভেত আমি আর স্টেফান বসে আছি একটা নিরিবিলি রেস্টুরেন্টে, এমনিতে এখানকার দামি রেস্টুরেন্ট গুলা তুলনামুলক ভাবে একটু কম ব্যস্ত থাকে আর রাতে তো আরো কম। সর্বসাকুল্যে ২ টা টেবিলে মানুষ আর সব ফাকা। কিছু একটা আলাপ করতে হবে তাই বললাম, স্টেফান তুমি কি কর? “আই ইউজ টু বি অ্যান এয়ার পাইলট ইন মাই ইয়াংগার লাইফ নাও এই এম এন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ারসুন্দর আলী হাসি মুখে বলে। পাইলটের কাজ কি সেটা আমি জানি কিন্তু এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ার কি করেন সেটা আমার ভালো জানা নেই, আপাতত জানার ইচ্ছা নাই কারণ এরই মাঝে খাবার এসে গেছে।
খাবার দাবার শেষে এবার ড্রিংকস পর্ব। 

আমি ভাবলাম এদের গল্পে কাবাবের হাড্ডি না হয়ে বরং আমি অন্য দূরে একটা টেবিলে বসি। একটা ককটেল ড্রিংকস নিয়ে আমি কোনার একটা টেবিলে টিভি দেখার অজুহাতে চলে আসি কিন্তু ছোটবেলা থেকে আড়চোখে তাকানো আমার স্বভাব [ ভালো ছাত্রদের পরীক্ষার খাতা দেখতে গিয়ে এই স্বভাবটা আমার পার্মানেন্ট হয়েগে ছে] তাই ফাকে ফাকে ওদের ও খেয়ালে রাখলাম। এক পর্যায়ে দেখি ইভেত লম্বা সময়ের জন্য স্টেফানকে চুমু খাচ্ছে অনেকটা দূর থেকে দেখলে চুম্বকের কারনে দুইটা মুখ একসাথে লেগে আছে টাইপের মনে হয়। তারপরই শেষ স্টেফান বিদায় নিয়ে হোটেলে চলে গেছে আমরা দুইজন গাড়ীতে উঠেছি বাসায় ফিরব বলে। আমার মনে নানান প্রশ্ন। প্রথমে জানতে চাইলাম ইভেত লোকটা কে? তুমি তো দেখলাম ভালোই দেখাইলা চুমায়ে টুমায়ে একদম আলুর ভর্তা বানায়ে ফেলেছ। সে হাসি মুখে বলল, ওমা আমার ভালো লাগার মানুষকে আমি চুমু দিবোনা তো কাকে দিবো আর তোমার এত আগ্রহ কেন? আমি বললাম না মানে ইয়ে তোমার তো বয়ফ্রেন্ড আছে আর আমি প্রাচ্যদেশ থেকে এসেছি তাই একজন মাঝবয়সী মহিলাকে অপরিচিত একটা মানুষকে লম্বা সময় ধরে চুমু দিতে দেখাটা আমার কাছে একটু ব্যতিক্রমী মনে হয়েছে তাই জানতে চেয়েছি, তারপরও আমি স্যরি বলে নিলাম আমার এই প্রশ্নের জন্য।

ইভেত এবার হাসি না দিয়ে একটু গম্ভীর হয়ে বলে," সে এক লম্বা কাহিনী তোমাকে কোনদিন বলা হয়নি। শোন স্টেফান আমার হাজব্যান্ড । আমরা একে অন্যকে চল্লিশ বছর ধরে চিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিন গুলো থেকে শুরু। আমি ফাইনআর্টসে পড়তাম আর স্টেফান ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। আমাদের প্রথম পরিচয় হয় ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়ামে। স্টেফান ইঞ্জিনিয়ার হলেও সে ভাস্কর্য পছন্দ করত, ল্যুভর মিউজিয়ামের গ্রাউন্ডফ্লোরে যে ভাস্কর্যের গ্যালারিটা আছে ওখানে একটা প্রদর্শনীতে আমরা জানতে পারি আমরা দুইজনই সুইজারল্যান্ড থেকে এসেছি এবং আমরা একই ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। বিদেশের মাটিতে দেশি মানুষ দেখলে এমনি একটু সফট কর্ণার তৈরি হয় সে থেকেই আলাপ তারপর ভালো লাগা এবং ভালোবাসা। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে আমরা একসাথে থাকা শুরু করি তারপর বিয়ে তারপর আমাদের লম্বা সুখের দিন। আমার দুই মেয়ে ক্যাথরিন আর সিন্দ্রেলাকে তো তুমি দেখেছোই।"

হ্যাঁ দেখেছি কিন্তু তোমাদের সুখের দিন শেষ হল কেন, আমি জানতে চাইলাম। সে দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করল,
"
স্টেফান ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করে সুইস বিমানবাহিনীতে জয়েন করে। কিছুদিন চাকরি করার পর সে প্রাইভেট বিমানে জয়েন করে। প্রাইভেট বিমানেতো জানোই যত পরিশ্রম তত টাকা। আমাদের দিন গুলো খুব ভাল যাচ্ছিল দুই মেয়ে বড় হয়ে যাবার পর স্টেফান সিদ্ধান্ত নিল আর টাকার প্রয়োজন নেই এবার একটু ফ্লাইট কমিয়ে দিব কিছুটা সময় রিলাক্সের জন্য রাখা হবে ।

আমি ঠিক করলাম স্টেফানসহ আমরা দুইজন একটা থাইল্যান্ডের ম্যাসাজ পার্লারে যাব, বডী ম্যাসাজ করালে শরীর সুস্থ থাকবে। জেনেভা শহরে তখন এই জাতীয় ম্যাসেজ পার্লার বিষয়টা নতুন, ব্যাপারটা হচ্ছে তোমাকে কিছু মানুষ শরীর ম্যাসাজ করে দিবে বিভিন্ন রকম হারবাল অয়েল দিয়ে পরে ম্যাসাজ শেষে তুমি কুসুম গরম পানিতে স্পাকরে তারপর বাসায় ফিরবে। এই ম্যাসেজ পার্লার গুলার ম্যনেজার থেকে শুরু করে মোটামুটি সবাই মহিলা। এখান থেকেই সর্বনাশের শুরু ! সিল্ভিয়া নামে থাইল্যান্ডের একমহিলা নিয়মিত ম্যাসাজ করে দিত স্টেফানকে এরই মাঝে কখন ওদের মাঝে প্রণয় হয়ে গেছে আমি বুঝতেই পারিনি। এমন কি আমার একজন বন্ধু প্রথম দিকে সাবধান করে দিয়েছিল এটা বলে যে সে স্টেফানকে সিল্ভিয়ার সাথে দেখেছে ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টের কোনায় বসে হাসি হাসি মুখ করে গল্প করতে! আমি পাত্তাই দেইনি কারন আমি বিশ্বাস করতাম যে মানুষটার সাথে আমি তিরিশ বছর ধরে এক সাথে হাসিকান্না শেয়ার করেছি সে কিছুতেই এত বিশ্বাসঘাতক হতে পারেনা তার উপর পাইলট হবার কারনে তাকে বিভিন্ন শহরে যেতে হয় একটা দুইটা মেয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে খেলে আর এমন কি? তবে মাঝেমাঝে আমাকে না জানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যেত স্টেফান যেটা আমার একদমই ভালো লাগতো না।


খুব খারাপ লেগেছে যখন দেখি একদিন সিল্ভিয়ার সাথে গভীর আলিঙ্গনরত অবস্থায় জেনেভা শহরের বার্ষিক ফায়ার ওয়ার্কসের আলোকছটা দেখছে অথচ বাসা থেকে বের হবার সময় স্টেফান বলে গিয়েছিল সে তার কোন এক পাইলট বন্ধুর বাসায় যাচ্ছে! আমি খুব পাশ দিয়ে হেটে গেলেও তার সামনাসামনি যাবার সাহস আমার ছিলোনা কারণ মনে হয়েছিল এত বছরের কাছের মানুষটিকে এই অবস্থায় দেখে হয়তো কোন অঘটন ঘটায়ে ফেলতে পারি। বাসায় এসে অনেকক্ষণ বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদেছি। তারপর থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়েছি যে মানুষটার সাথে আমার এতগুলা বছর কেটেছে তাকে বিদায় দেবার। এক সময় আমি নিজে থেকেই বলেছি স্টেফানকে আমার জীবন থেকে চলে যেতে, কারন আমি চাই স্টেফান যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক প্রতিটা দিন তার আনন্দঘন কাটুক। গত তিন বছর ধরে স্টেফান সিল্ভিয়ার সাথে সিঙ্গাপুরে থাকে মাঝে মাঝে কাজে জেনেভা আসে আমি জানি সে আমাকে ভুলতে পারেনি তাই আসার আগে আমাকে জানায়। আর আমার বয়ফ্রেন্ড পিটারকে তো তুমি দেখেছ, নিঃসঙ্গতা কাটাতে আমি বেছে নিয়েছি কিন্তু এখনো আমার সমস্ত পৃথিবী জুড়ে আছে স্টেফান ! এই মানুষটাকে আমি শেষ নিঃশ্বাসের আগে কোনদিন ভুলতে পারবোনা।"

গল্প শেষে আমরা বাসায় ফিরে এসেছি, ইভেত বলল, তোমার সময় থাকলে আমি তোমাকে আমাদের পরিবারের এলবাম দেখাতে পারি। দুইজন দুইটা কফি নিয়ে এলবামের ম্যাটপেপারে ছবি দেখছি, সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইভেত তার ছবি গুলা সাজিয়েছে। সত্তরের দশক আশির দশক -নব্বইয়ের দশক এবং দুই হাজার সালের পরের দিন গুলা। সত্তরেরে দশকের ছবি গুলা দেখানোর সময় খেয়াল করলাম ইভেতের চোখ মুখ অনেক উজ্জ্বল একে একে আমাকে ছবির সাথে সংশ্লিষ্ট গল্প বলছে, আশির দশকের ছবি গুলার ছবি তার সাথে তার মেয়েদের বড় হবার গল্প আরও নানান গল্প। আমি খুব যত্ন করে খেয়াল করলাম এলবামের পাতা যতই সামনে যাচ্ছে ততই ইভেতের মুখ চোখ মলিন হয়ে আসছে সমানুপাতিক হারে।
শেষ একটা ছবিতে ইভেতের চোখ দেখলাম বেশ কিছুক্ষণ স্থির হয়ে রইল, সে আমাকে ছবিটা দেখায়ে বলল এই ছবিটাই হয়তো আমাদের একসাথে সুখী জীবনের শেষ ছবি। আমরা লস আঞ্জেলেস গিয়েছিলাম বেড়াতে ওখানেই তোলা, বলতে বলতে টপ করে এক ফোঁটা জ্বল ইভেতের চোখ থেকে ছবিটার উপর পড়ল। ছবিটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে ভেবে টিস্যু দিয়ে মোছার জন্য ইভেত টিস্যু খুঁজতে শুরু করে, আমি খেয়াল করলাম আমার নিজেরও আশেপাশের সব কিছুই তুলনামুলকভাবে ঘোলাটে মনে হচ্ছে। টিস্যু দিয়ে ছবিটা পরিষ্কার করার সময় আমি আমার ডানহাতটা ইভেতের কাধে রেখে বললাম থিঙ্কস উইল বি ফাইন! অলদো আই ডোন্ট প্রে দিজ ডেজ বাট আই ইউজ টু প্রে ইন মাই চাইল্ডহুড। মাই অল বেষ্ট উইশেস উইল বি উইথ ইউ

ইভেতের বাড়ী থাকার সময় আমি মাঝেমাঝে খেয়াল করতাম ইভেত দুই হাত বুকের কাছে গুটিসুটি বেধে দরজায় কারো জন্য অপেক্ষা করছে আর খোলা মাঠের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে, কি জানি হয়তো স্টেফানের জন্য, এই অসম্ভব মমতাময়ী মানুষটার জন্য আমার দেবার কিছুই নেই। শুধু প্রার্থনা রইল কোন তুষারশুভ্র সকাল, বৃষ্টি ভেজা দুপুর কিংবা জোছনাস্নাত রাতে যেন স্টেফান একগুচ্ছ গ্লাডিওলাসসহ ইভেতের ছোট্ট পৃথিবীতে স্থায়ীভাবে ফিরে আসে!

*************** ********************

গল্প শেষে ইভেত হফার কে আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। সুইজারল্যান্ডে সব চেয়ে কঠিন ব্যাপার একটা ভাল বাড়ী [বাসা] পাওয়া। আমি প্রথমে এসে ৩ দিন হোটেলে থেকেছি তারপর কোনভাবে সাপ্তাহিক ভাড়া দিয়ে ইভেতের বাড়ীর চিলেকোঠায় একটা ঠাই। তার তিন মাস পর ইউনিভার্সিটি থেকে এপার্টমেন্ট পেয়েছি। যে কটা দিন ইভেতের বাড়ীতে ছিলাম প্রথম দিকের দিনগুলাতে নানান বিষয়ে তার সাথে আমার খিটিমিটি লেগেই থাকত। নতুন বাড়ীতে আসার পর মনে হলো ঝগড়াবিহীন জীবনটা বড়ই পানসে!আজব আজব সব বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো , যেমন সকালে গোসল করে কাপড় না ধুয়েই ইউনিভার্সিটি চলে এসেছি ফিরে গিয়ে দেখি ইভেত কাপড় গুলা ওয়াশিং মেশিনে ধুয়ে শুকায়ে ইস্ত্রি করে আমার পড়ার টেবিলে একটা চিরকুট সহ রেখে গেছে, চিরকুটে লেখা এইবারই শেষ! আর কোনদিন বাথরুমে কাপড় ভেজায়ে রেখে গেলে আমি নতুন ভাড়াটিয়া খুঁজতে বাধ্য হবো। আমি চিরকুট হাতে নিয়ে যুদ্ধংদেহি মুডে গিয়ে বলতাম দেখ আমি তোমাকে কাপড় ধুয়ে ইস্ত্রি করে রাখতেও বলিনি আবার হুমকি ধমকি দিতেও বলিনি। আর শোন আমি তোমার বাড়ীতে কিন্তু মাগনা থাকিনা
গুনে গুনে টাকা দিয়ে থাকি তাই তোমার করুণা না দেখালেও চলবে। যেদিন ভাল এপার্টমেন্ট পেয়ে যাব ঠিক সেদিনই চলে যাব তোমাকে বিরক্ত করবোনা । আমি খুব ভাল করেই জানতাম প্রতিদিন এই কাজটা করলেও সে আমাকে বিদায় করে দিবেনা তাই মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই এটা করতাম। যে কয়বার ইভেতের ভয়াবহ ঝাড়ি খেয়েছি তার বেশির ভাগই অগোছালো থাকার জন্য!ইভেতের ফেইস বুক একাউন্ট আছে আমার বন্ধু লিস্টে যারা আছেন তারাতো দেখতে পাবেনই আর যারা দেখতে চান [Yvette Hofer] দিয়ে সার্চ করলেই দেখতে পাবেন।
*************** *********************


আমার লেখাগুলো আমার পড়ার টেবিলের ভাঙ্গা টেবিল ল্যাম্প , বিভিন্ন ভাষার গল্পের বই, এসট্রেতে রাখা আধ খাওয়া সিগারেট, কিংবা দুইদিন আগে খেয়ে রাখা না ধোয়া কফি মগের মতই অগোছালো! যারা প্রচণ্ড গোছানো লেখা পড়ে অভ্যস্ত আমি জানি এই জাতীয় হাবিজাবি লেখা আপনাদের ভালো লাগবেনা, তাই অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
=================================
মাহমুদ
ফেইস বুক আইডিঃ
Mahmud Geneva
ব্লগঃ http:// www.nil-pipra.blogspot.com/