ঘুম ঘুম চোখে ফোন ধরলাম, স্যালু বলতেই ইমান্যুয়েল বলল ১০ টা বাজে এখনো
ঘুমে? চল আজকে তোমাকে একটা সারপ্রাইজ ভিজিট উপহার দিব। আরে আমি কাল আমেরিকা
যাচ্ছি এখনো ব্যাগ গুছানো হয়নি তার উপর ডেনভারে আমার একটা প্রেজেন্টেশন
আছে এখনো রেডি করিনাই, আজকে সারা দিন বরাদ্দ রেখেছিলাম এই দুইটা কাজের
জন্য।
সে আমাকে সামান্য রাগের ভঙ্গিতে বলল তুমি কি মেয়ে লোক নাকি যে ব্যাগ গুছাতে সময় লাগবে আর প্রেজেন্টেশন তুমি ওখানে গিয়েও করতে পারবা, ভারী কাপড় পরে ১০ মিনিটে নিচে চলে আস আমি আর পেত্রিসিয়া গাড়িতে অপেক্ষা করছি।
সে আমাকে সামান্য রাগের ভঙ্গিতে বলল তুমি কি মেয়ে লোক নাকি যে ব্যাগ গুছাতে সময় লাগবে আর প্রেজেন্টেশন তুমি ওখানে গিয়েও করতে পারবা, ভারী কাপড় পরে ১০ মিনিটে নিচে চলে আস আমি আর পেত্রিসিয়া গাড়িতে অপেক্ষা করছি।
চিন্তা
করলাম এই জীবনে কোন কিছুই আমি গুছায়ে করতে পারি নাই তাই চেষ্টা করেও কোন
লাভ নাই, তারচেয়ে বরং চেষ্টা না করাই ভাল যা আছে কপালে। গাড়িতে উঠার পর
পেত্রিসিয়া বলল আমরা জানতাম তোমার আমেরিকা যাবার ফ্লাইট কাল তারপর ও তুমি
আসবা এটাও আমি জানতাম, সো ওয়েলকাম। জানতে চাইলাম ল্যাবের বাকিরা যাবেনা? সে
বলল যে যার গাড়ী করে সময় মত পৌঁছে যাবে। পেত্রিসিয়াকে আমার বরাবরই ভালো
লাগে তার কারন হচ্ছে তার আলাপের বেশির ভাগই খারাপ খারাপ বিষয় নিয়ে এবং সে
মারিজুয়ানা টানে। বিদেশে এসে দুইবার মারিজুয়ানা টানার সৌভাগ্য হয়েছে
পেত্রিশিয়ার কল্যাণে।
যাহোক দুই ঘণ্টার খারাপ খারাপ বিষয়ে
আলাপ সহ গাড়ী ভ্রমন, মাঝপথে গাড়ী থামিয়ে মারিজুয়ানা টেনে পৌছালাম
গ্রুইয়ার ক্যেসেল [Gruyere Castle] সুইজারল্যান্ডের দর্শনীয় স্থানের একটি,
প্রথমে খাইদাই তারপর ঘুরাঘুরি, আজকের দুপরের ম্যেনু “ফন্দু” এবং আজকের
স্পন্সর ইমানুয়েল কারন সে একটা নতুন প্রজেক্ট শুরু করতে যাচ্ছে যেখানে
খাইদাই বিনোদন সহ একটা ছোট খাট ফান্ড আছে। বিল দিতে হবেনা শুনলে এমনি আমার
ক্ষুধা দ্বিগুণ হয়ে যায়, ফন্দু সুইসদের জাতীয় খাবার, সুইজারল্যান্ড
মানেই আমার কাছে চকলেট- দারু-ঘরি-স্কি-লেক আর ভুরি ভুরি ব্যাংক। এদের সব
কিছুই আমার পছন্দ কিন্ত জাতীয় খাবারটা খুব অদ্ভুত! বিভিন্ন রকম পাউরুটি এক
করম নরম চীজে ডুবায়ে ডুবায়ে খায়। সাথে বিভিন্ন রকম মাংসের ফিলেট আর গরম
ওয়াইন লেবু সহ।
খাবার দাবার শেষ এবার ক্যাসাল অথবা ভুতের
মিউজিয়াম দুইটার একটা দেখা জাবে, যে কোন কিছুতেই ভোট নেয়াটা সুইসদের স্বভাব
এবারো তার ব্যতিক্রম নেই। আমার ভোট ক্যসালের দিকে হলেও সংখ্যালঘু ভোটে
হেরে বাধ্য হয়ে ভুতের মিউজিয়ামে জেতে হল। মিউজিয়াম বিষয়টা আমার এমনি খুব
একটা ভালো লাগেনা তার উপর ভুতের মিউজিয়াম! ভুত ব্যাপারটা আমার কাছে
গাঁজাখুরি ছাড়া বেশি কিছু মনে হয়না কিন্তু [Giger Museum ] মিউজিয়ামের
বৈশিষ্ট হল এটা যিনি ডিজাইন করেছেন তার নাম H.R Giger বেশ কটা হলিউড
ছবিতে অ্যানিমেশন করে ভদ্রলোক অনেক সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। কিন্তু একটা
বিষয় খেয়াল করলাম ভূতদের বেশির ভাগই মহিলা ভূত। আমার ধারনা স্টিফেন উইলিয়াম
হকিং সহ জ্ঞানী গুণী মানুষরা তাদের বেশির ভাগ সময় মহিলাদের নিয়ে মাথা
ঘামান তাই তাদের সৃষ্টিকর্ম গুলাতে মহিলাদের প্রাধান্য একটু বেশি থাকে।
খাবার
দাবার শেষ, মিউজিয়াম দেখাও শেষ এবার একটু শপিং । এই পর্যায়ে আমি শপিং এ না
গিয়ে ক্যেসেল দেখতে যেতে চাইলাম কিন্তু আরেক দফা ভোটে হেরে বাধ্য হয়ে
লরকিদের সাথে শপিং এ সায় দেয়া ছাড়া আমার উপায় নেই, সুইজারল্যান্ড আরব দেশের
মত না এখানে কঠিন গণতন্ত্র তবে এই দফা শপিংটা একটু ডিফারেন্ট এখানে একটা
মার্কেট আছে যেটাতে শুধু চীজ- দারু আর চকলেট পাওয়া যায় বলে একজন আশ্বস্ত
করল। শপিং সেন্টারটা অনেক বড় তবে মাত্র তিনটা ফ্লোর। প্রথমটাতে চীজ
দ্বিতীয়টাতে দারু আর তৃতীয়টাতে শুধু চকলেট অন্য কিছু নাই। আবাক না হয়ে উপায়
নেই এত বড় একটা মার্কেট শুধু তিনটা আইটেম। তার চেয়ে বেশি অবাক হলাম চীজের
এত রকমফের দেখে। মানুষের সৃজনশীলতার তুলনা হয়না। এই জীবনে কিছুই করা হলনা
আমার, অন্তত রাখাল হলেও দুই একটা চীজের ডিজাইনার হতে পারতাম হয়তো, আফসোস!!